কলাপাড়ার অলি গলিতে অবাধে চলা কোচিং বানিজ্য Latest Update News of Bangladesh

রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২১ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




কলাপাড়ার অলি গলিতে অবাধে চলা কোচিং বানিজ্য

কলাপাড়ার অলি গলিতে অবাধে চলা কোচিং বানিজ্য




তানজিল জামান জয়,কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি॥  শিক্ষা ব্যবস্থায় ’কোচিং’ বন্ধে তৈরী করা নীতিমালা বৈধ বলে মহামান্য হাইকোর্ট রায় দেয়ার পরও পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নীতি মালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শহরের অলি গলিতে অবাধে চলছে একাধিক কোচিং সেন্টার।

সরকারের দেয়া সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার পরও কোচিংবাজ এসব শিক্ষকরা তাদের নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানে যতœবান না থেকে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করছেন নিজেদের পরিচালিত প্রাইভেট টিউশনে ও কোচিং সেন্টারে যেতে।

শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে কোচিংবাজ এসব শিক্ষকরা প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও এদের বিরুদ্ধে এতদিন কোন পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এরপর দেরীতে হলেও এসব কোচিং বন্ধে অভিযান শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন।

এদিকে কোচিং বানিজ্য বন্ধে সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী ইউএনও, শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত মনিটরিং কমিটি থাকার পরও সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রনালয় নির্দেশনা অনুসারে প্রতি স্কুলে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন ও কোচিং বন্ধে পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হয়েছে।

এরপরও প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে এসব কোচিংবাজ শিক্ষকরা নিজেদের বাসায় ব্যাচ করে প্রাইভেটের আদলে কিংবা বাড়ী ভাড়া করে সকাল থেকে রাত ৯টা-১০টা পর্যন্ত নির্বিঘেœ চালিয়ে যাচ্ছে কোচিং বানিজ্য। এ সকল শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তাদের পরিচালিত কোচিং সেন্টারে না পড়লে শ্রেনী কক্ষে শারিরীক-মানসিক নির্যাতন সহ পরীক্ষার খাতায় ও ব্যবহারিক বিষয়ে নম্বর কমিয়ে দেয়ার।সরেজমিনে জানা যায়, কলাপাড়া পৌরশহরের নাচনাপাড়া এলাকায় মর্নিং সান কোচিং সেন্টার, উম্মুলকুরা কোচিং সেন্টার, এডুকেশন সেন্টার,

এতিমখানা এলাকায় রোজ গার্ডেন কোচিং সেন্টার, সমাজকল্যান রোডে হলি চাইল্ড স্কুল কোচিং সেন্টার, ইসলামপুর রোডে প্রতিভা কোচিং সেন্টার, কুমারপট্রি এলাকায় কলাপাড়া কোচিং সেন্টার ছাড়াও রহমতপুর, নজরুল ইসলাম সড়ক, চিংগড়িয়া, আখড়াবাড়ি সড়ক, কর্মকার পট্টি, কুমার পট্টি, সবুজ বাগ, কলেজ রোড, অফিস মহল্লা সহ শহরের বেশ কয়েকটি আবাসিক এলাকায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের একাধিক শিক্ষক হাইকোর্টের রায়ের পরও শিক্ষা কোচিং বানিজ্য চালিয়ে আসছেন। একই চিত্র মহিপুর থানা শহর ও কুয়াকাটা পৌরশহরে।

এসকল কোচিং সেন্টারে কিংবা শিক্ষকদের বাসায় সকাল ৬টা থেকে ৭টা, ৭টা থেকে ৮টা, ৮ট থেকে ৯টা, বিকেল ৩টা থেকে ৫টা এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা-১০টা পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নীতিমালা ও হাইকোর্টের রায়ের তোয়াক্কা না করে স্বস্ব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন।

এমনকি অতিরিক্ত ক্লাশের নামে দু’একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনও চলছে কোচিং বানিজ্য। এতে দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে বিদ্যালয় বিমুখ হয়ে পড়ছে। মেয়েরা শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে বাল্য বিয়ের শিকার হচ্ছে। এছাড়া শহরের আবাসিক এলাকায় রাত ৯টা-দশটা পর্যন্ত চলমান এসকল কোচিং সেন্টারের উঠতি বয়সের শিক্ষার্থীরা যথাযথ নজরদারীর অভাবে ক্রমশ: বিপথগামী হয়ে পড়ছে।

অপরদিকে বানিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে ওঠা শহরের কয়েকটি কিন্ডার গার্টেনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে কোচিং পরিচালনা করার অভিযোগ রয়েছে। এসকল কিন্ডার গার্টেনের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ক্লাশের কথা বললেও মাথাপিছু আদায় করে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। এদিকে কিন্ডার গার্টেনের পাশা পাশি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও জড়িয়ে পড়ছেন কোচিং বানিজ্যে। তারাও বাড়ী ভাড়া নিয়ে কিংবা নিজেদের বাসা-বাড়ীতে গড়ে তুলেছেন টিচিং হোম।

যদিও কোচিং বানিজ্য বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের ২০১২ এর নীতিমালার অনুচ্ছেদ ১৩ এর (ক)এ কোচিংবাজ শিক্ষকদের এমপিও স্থগিত, বাতিল, বেতন ভাতাদি স্থগিত, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত, বেতন এক ধাপ অবনমিতকরন, সাময়িক বরখাস্ত, চূড়ান্ত বরখাস্ত, অনুচ্ছেদ ১৩ এর (খ)এ এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও বিহীন কোচিংবাজ শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত বেতন ভাতাদি স্থগিত, সাময়িক বরখাস্ত, চূড়ান্ত বরখাস্ত, অনুচ্ছেদ ১৩ এর (গ)এ এমপিও বিহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোচিংবাজ শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত বেতন ভাতাদি স্থগিত, সাময়িক বরখাস্ত, চূড়ান্ত বরখাস্ত, অনুচ্ছেদ ১৩ এর (ঘ)এ কোচিং বানিজ্যে জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ ব্যবস্থা গ্রহন না করলে পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দেয়া সহ প্রতিষ্ঠানের পাঠ দানের অনুমতি, স্বীকৃতি, অধিভুক্তি বাতিল, অনুচ্ছেদ ১৩ এর (ঙ)এ সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষক কোচিং বানিজ্যে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা ১৯৮৫ এর অধীন অসদাচরন হিসেবে গন্য করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের কথা বলা হলেও এর প্রয়োগ না থাকায় কলাপাড়ায় এখনও বেপরোয়া গতিতে চলছে কোচিং বানিজ্য।

এর আগে উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে কোচিং বানিজ্যে জড়িত শিক্ষকদের নামের তালিকা মন্ত্রনালয়ে প্রেরন করা হয়েছে। প্রেরিত ওই তালিকায় সরকারী খেপুপাড়া মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গনিত, ইংরেজী ও ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক, বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজী, গনিত ও বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক, লালুয়া জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শরীর চর্চা শিক্ষক, নুর মোহম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক, চাকামইয়া বেতমোর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গনিত বিষয়ের শিক্ষক, শিশু পল্লী একাডেমীর গনিত বিষয়ের সহকারী শিক্ষক, লালুয়া নয়াপাড়া দাখিল মাদ্রাসার ইংরেজী বিষয়ের শিক্ষক, নেছার উদ্দীন ফাজিল মাদ্রাসার কয়েক কোচিংবাজ প্রভাষক, কলাপাড়া মহিলা ডিগ্রী কলেজের ইংরেজী ও ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক, সরকারী মোজাহার উদ্দীন বিশ্বাস ডিগ্রী কলেজের ইংরেজী, গনিত, রসায়ন বিষয়ের শিক্ষকদের নাম রয়েছে।

এছাড়া রহস্যজনক কারনে তালিকাভুক্ত করা হয়নি ধানখালী ডিগ্রী কলেজের তথ্য প্রযুক্তির শিক্ষক, মহিলা ডিগ্রী কলেজের হিসাব বিজ্ঞান শিক্ষক, সরকারী মোজাহার উদ্দীন বিশ্বাস কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক ছাড়াও বেশ কিছু মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইংরেজী, গনিত, বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা, তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ের কোচিংবাজ শিক্ষকদের নাম। যারা বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছেন কোচিং বানিজ্য।উপজেলা ভারপ্রাপ্ত মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: মনিরুজ্জামান জানান, ’শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা অনুসারে কোচিং বানিজ্য বন্ধে শিক্ষা অফিস থেকে বিদ্যালয় গুলোর প্রধান শিক্ষকদেরকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। যে সমস্ত শিক্ষক কোচিং বানিজ্যে জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নামের তালিকা শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে প্রেরন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।’কলাপাড়া ইউএনও মো: মুনিবুর রহমান জানান,

’আমি ইতোমধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর প্রধান, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা শিক্ষা কমিটির সদস্যদের নিয়ে সভা করেছি এবং ওই সভায় প্রতিষ্ঠান প্রধানদের শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী তাদের স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের অনতিবিলম্বে কোচিং থেকে নিবৃত্ত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। এরপরও সরেজমিনে দেখলাম রাত ৯টা-১০টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা স্কুল ব্যাগ কাধে নিয়ে ঘুরছে, যা নিতান্তই দু:খজনক।’ইউএনও আরও জানান

, ’রবিবার রাতে এসিল্যান্ড কে সাথে নিয়ে অভিযানে গিয়ে দেখি এডুকেশন সেন্টার নামের একটি কোচিং সেন্টারে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা কোচিং করাচ্ছে। ইতোমধ্যে সেই সংক্রান্ত ডকুমেন্ট জব্দ করা হয়েছে, যা পরবর্তীতে বিধি ও আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এবং এ কার্যক্রম ক্রমান্বয়ে সমগ্র কলাপাড়ায় চলবে।’

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD